সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

পি.আর নির্বাচনের অসুবিধা কি? কেন চাইছে না বিএনপি?


বর্তমান সময়ে বিশ্বের ৯১ টি দেশে সরকার গঠন হচ্ছে পিআর বা আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে৷ এই পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যক্তি-প্রার্থীদের মধ্যে হয় না। নির্বাচন হয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। একজন ভোটারের ভোটও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পছন্দের দল ক্ষমতায় যাক বা না ই যাক, নষ্ট হয়না একটি ভোটও। যে দল যত শতাংশ ভোট পায় সংসদে ঠিক তত শতাংশ আসনই বরাদ্দ হয় দলটির জন্য৷ এত কিছুর পরেও বিএনপির মত দেশের বড় দল ঘোর বিরোধী পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে। কিন্তু ঠিক কি কি অসুবিধা আছে এই ব্যবস্থায়?

মূলনীতিতে এক হলেও একেক দেশের 'পিআর' একেক রকম। এ পদ্ধতিতে ভোটার যেখানে দলকে ভোট দেয়, সেখানে নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক নেতার হাতে জিম্মি থাকেনা। সে হিসেবে প্রচলিত নির্বাচনের চেয়ে এ পদ্ধতিই সুবিধাজনক। তবে অনেক বিশ্লেষক দিচ্ছেন ভিন্ন মত। বর্তমানে কোন দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সেই প্রার্থীর সামাজিক অবস্থান, নিজ আসনে প্রভাবসহ অনেক কিছুই বিবেচনায় রাখতে হয় দলীয় প্রধানের। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে দলীয় প্রধান নিজের খেয়াল খুশিমতো প্রার্থী দিতে পারেন। কারন ভোটার দলকে ভোট দেবে। তখন ঘুষ বা অন্য কোনো অনৈতিক প্রথা অবলম্বন করে দলীয় প্রধানের থেকে প্রার্থীতা নেয়া সম্ভব। ফলে যোগ্য প্রার্থী পাওয়ার সুযোগ কমে যায় দলের জন্য। 


 

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে অভ্যস্ত। স্বাভাবিকভাবেই সেসব দেশের সরকার রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনা করে আসছে। তবে বিশ্লেষকদের মতামত, সেসব উন্নত দেশের সাথে বাংলাদেশকে মিলানো ঠিক হবে না। কারন সেসব দেশে কে এমপি হলো তা নাগরিক জীবনে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগন সংসদ সদস্যকে চান তাদের স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে৷ যেকোনো প্রয়োজনে, উন্নয়নমূলক কাজে তারা এমপির সরনাপন্ন হন। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রকৃতপক্ষে কোনো জনপ্রতিনিধি পাবেন না সাধারণ জনগন। একজন সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে কেবল দলীয় প্রতিনিধিত্ব করবেন৷ যেহেতু জনগন তাঁকে ভোট দেয়নি, ভোট দিয়েছে দলকে, সেহেতু জনগনের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাও থাকবে না একজন সাংসদের। 

বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও পিআর পদ্ধতি একটি একটি হুমকি। ধরা যাক আসন্ন নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো বিএনপি। অন্য কোনো দল এত ভোট পায়নি৷ এক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিতে অল্প কিছু আসন বিরোধী দলকে দিয়ে বেশিরভাগ আসনে আধিপত্য থাকবে বিএনপির। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে নিজেদের পাওয়া কেবল ৪০ শতাংশ আসনই পাবে বিএনপি। বাকি ৬০ শতাংশ দলই পাবে অন্যান্য দলগুলো। যার ফলে বড় দলগুলোকে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করতেই দেখা যায়। তবে সরকারিভাবে এখনো চুড়ান্ত হয়নি কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। যেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০, নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। আর উচ্চ কক্ষের ১০০ টি আসনের নির্বাচন হবে পিআর পদ্ধতিতে।  সরাসরি ভোট এবং পিআর পদ্ধতি—দুটোর সংমিশ্রনেই একটা ব্যবস্থা করা হতে পারে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ