আদিল মাহফুজ রনি
একদিন তোমায় নিয়ে ফুটপাতে হাঁটছি। তীব্র দুপুরে দুজনের মাঝে শব্দ ছোড়াছুড়ি হচ্ছে হরদম। হঠাৎ রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে গোটা দশেক অর্ধনগ্ন, রোগা, পাতলা শিশু উঠে এলো। তারা সবাই মিলে আমাদের পথ আটকে দাঁড়াল। সবার মুখের ভাবখানা এমন যেন কিছুতেই আমাদেরকে সামনে এগোতে দেবে না। তুমি বিরক্তি ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলে,
“এই কী চাই?”
তারা আধো আধো স্বরে বলল,
“আমাদের নর্দমায় থাকতে খুব কষ্ট হয়। আমাদেরকে তোমাদের সাথে নিয়ে চলো।”
উত্তর শুনে অবাক হয়ে যাই আমি। বিস্ময় নিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করি,
“আমরা নিয়ে যাবো কেন? তোমরা কারা?”
প্রশ্ন শুনে সবার মুখ মলিন হয়ে যায়। সবথেকে দূর্বল দেখতে শিশুটি প্রশ্নের উত্তর দেয়। সে বলে,
“আমরা তোমাদের সন্তান। তুমি আমাদের বাবা। তোমার পাশে দাঁড়ায়ে থাকা মেয়েটা আমাদের মা।”
এবার কিন্তু আমার ভীষণ রাগ পেয়ে যায়। আমি উচ্চস্বরে খেঁকিয়ে উঠে বলি,
“কী যা তা বলছো তোমরা? মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমাদের সন্তান আসবে কোত্থেকে? আমাদের এখনো বিয়েই হয়নি। সরে যাও সামনে থেকে। যত্তসব!”
এরকম ঝাঁঝালো ব্যবহারে সবগুলো শিশুর চোখ ছলছল করে ওঠে। তারা আর কথা বাড়ায় না। সবাই একে একে পথ ছেড়ে দেয়।
এরপর আমি আবার তোমাকে নিয়ে হাঁটছি। কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ আমার বুকটা কেঁপে উঠল। আমি পেছনে ফিরে তাকালাম। দেখলাম বাচ্চাগুলো ধীরে ধীরে আবার নর্দমায় নেমে যাচ্ছে। আমার মনে হলো, এরা কি সত্যি আমার আর তোমার সন্তান? কিন্তু আমরা তো কখনো একসাথে রাত কাটাই নি। তাহলে? ভাবনার এ-পর্যায়ে তুমি আমাকে ডাকলে। বললে,
“এই, কোথায় হারিয়ে গেলে?”
জীবনের গল্প (Jiboner Golpo) প্রেমের গল্প (Premer Golpo) । সহ সাহিত্য বিষায়ক যেকোন লেখা ।
তোমার ডাকে আমার ঘোর কাটলো না। নতুন এক চিন্তা আমাকে গ্রাস করে নিল। আমি বুঝলাম তুমি আর আমি একসাথে থেকেছি। একবার,দুইবার নয়। অনেক বার থেকেছি। সে থাকায় তুমি ছিলে আমার কল্পনা হয়ে আর আমি ছিলাম আমি হয়ে। অর্থাৎ এরা আমাদেরই সন্তান। হ্যাঁ, এরা তো আমাদেরই সন্তান। ভাবনার রেশ কেটে যেতেই আমার খুব তৃষ্ণা অনুভূত হয়। বাচ্চাগুলোকে কাছে টেনে নেওয়ার তৃষ্ণা। কিন্তু যতক্ষণে আমার সম্বিৎ ফিরেছে ততক্ষণে তারা সবাই উধাও হয়ে গেছে। তারা সবাই হারিয়ে গেছে। ঠিক আগের মত করেই হারিয়ে গেছে অদৃশ্য কোন এক দেশে। এক বুক চাপা অভিমান সাথে নিয়ে তারা প্রহর কাটাচ্ছে। পৃথিবীর আলো বাতাস তাদের স্পর্শ করে না। আহারে কষ্ট! খুব কষ্ট!
এবার আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। নিচুস্তরের এক প্রাণী মনে হলো। অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো একটা শব্দ, ছি! ছি! ছিহ!
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল- mahfuz7709@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ