লেখা : নাদিয়া ইসলাম বীথি
মার্লেবন স্কুলের রিসিপশনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সারাহ। নিজের শত কর্মব্যস্তার মাঝেও কিছু চ্যারেটি কাজের সময় করে নেয় সে। প্রিন্সেস ট্রাস্ট চ্যারেটি সংগঠনের হয়ে শিশুদের মাঝে অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা জাগ্রত করার কাজটি করছে সারাহ।
ক্লাস ভর্তি ঝলমলে মুখ, সবার বয়স সাত থেকে দশ এর মধ্যে। সারাহ UNCRC এর আর্টিকেল গুলো এক এক করে ব্যখ্যা করতে লাগলো। Non-discrimination (article 2), Right to life survival and development (article 6) এই অধিকারগুলির সফল বাস্তবায়ন পৃথিবীর দরিদ্র দেশের অসহায় শিশুদের জন্য সবচেয়ে জরুরি। এই নিয়ে ক্লাসের বাচ্চাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। (article 12) Right to be heard, ক্লাসময় তুমুল হইচই। সবার অভিযোগ কনভেনশনের এই আর্টিকেল তো তাদের মা-বাবা একদমই মানতে নারাজ। সারাহ সব ছেলে মেয়েদের শান্ত করে তারপর বুঝেয়ে বললেন, যখন তখন বায়না করলে তা শোনা কিন্ত মা-বাবার বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে না। শিশু অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সনদের ৯ নাম্বার আর্টিকেলে বলা আছে ''child or young person shouldn't be separated from their parents...'' এই আর্টিকেল ব্যাখ্যা করা সারাহর জন্য সহজ হল না। দুটি মানুষ মিলেমিশে থাকতে না পারলে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার নিশ্চয়ই আছে আবার একটি শিশুর ও অধিকার আছে মা-বাবা আর পুরো পরিবারের মাঝে বেড়ে ওঠার।
একমাত্র ছেলে রুহান এর আদুরে মুখ সারাহর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মাঝে মাঝেই মায়ের গলা ধরে আহ্লদে ঝুলে পড়ে, আর টেনে টেনে বলে ''ইস বাবা আমাদের সাথে থাকলে ভীষণ মজা হত''। ক্লাসের হইচইয়ে সম্বিৎ ফিরে পেলো সারাহ, তারপর বলে উঠলো কিন্তু কিন্তুকিন্তু ..'' unless: staying with their parents could be harmful to them; or. it's impossible for them to stay with their parents''।
ক্লাসের সিঙ্গেল প্যরেন্টস এর সাথে থাকা বেশ কিছু শিশুকে এই আনলেস ব্যাখ্যাটি দিয়ে সন্তুষ্ট করা গেলো না, নিজের ছেলেকেই তো সন্তুষ্ট করতে পারেনি সারাহ। ক্লাস ছুটি দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালো সে... আইনের সেকশন, সাবসেকশ্ন কনভেনশন, প্রোটকল এইসব মাঝে মাঝেই অর্থহীন মনে হয় তার। সুখ, আনন্দ, মনের সন্তুষ্টি কি শুধু আইন দিয়ে নিশ্চিত করা যায়!
0 মন্তব্যসমূহ