দেহান্তী আক্ষেপ
মাইনুল হোসেন
কোনো এক রেললাইনের পাশে বসে চাঁদ দেখতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে।
রেললাইনের একপাশে থাকবে বিস্তৃত ধানের মাঠ।
আরেক পাশে, একটা গৃহস্থবাড়ির ফলজ বৃক্ষাবৃত পুকুর।
মধ্য ডিসেম্বরের শীতল রাত, ঘাসের উপর টুপটাপ শিশিরের আত্মহুতি, কুয়াশা মেশানো জোছনা আর সিগারেট হাতে আমি৷
দৃশ্যটা আমার বড় চেনা।
পুকুর, পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিচ্ছবি, পুকুরের পাশে ওটা কি?
হ্যা কবর ই তো!
আমার বন্ধুর কবর
সবুজ ঘাসের চাদরে ঢাকা একটা ছোট্ট কবর
বিশাল হৃদয়ের একটা শীর্নকায় মানুষের কবর।
নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল একটা মানুষের কবর৷
একসাথে বহু পথ চলা,বহুরাত রাস্তার নিয়ন আলোর নিচে ভবঘুরে পনার সঙ্গীর কবর।
না
একটা না
অনেকগুলো কবর
বন্ধুর কবরের পাশেই আমার প্রেমিকার কবর
একটা গোটা আস্ত পৃথিবী মাটির বুকে চাপা পড়ে আছে।
একটা ঝরণার মত হাসি,একটা ফুলের মত মুখ
একটা নদীর মত চঞ্চল প্রান আর আকাশের মত বিশাল বুক।
বেলীর ঝোপের নিচে শুয়ে আছে, বেলীফুলের মত মেয়েটা।
তার পাশের কবরটা পাশের বাসার পাশের জামিল ভাইয়ের
একবুক ভরা স্বপ্ন,বাবা মায়ের আশা,বিসিএসের প্রস্ততি আর বুকের এক কোনে ক্যান্সারের মত গজিয়ে ওঠা প্রেম।
সবকিছু এক নিমিষে ধুলো জমা ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে এখানে এসে মাটির বুকে মিশেছে৷
মাটিতেই শুরু,মাটিতেই শেষ।
আর ওই যে এককোনে আগাছা গজিয়ে ওঠা কবরটা,
ওইটা আমার বর্তমান ঠিকানা
এক বর্ষাদিনে আপনদের চোখে বর্ষা ঝরিয়ে এইখানে এসে উঠেছি।
ইচ্ছেরা ছুটে চলছে
আমি শুয়ে আছি অচল,অসাড়
শুয়ে আছি একবুক হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে
জোছনা দেখতে না পাওয়ার হতাশা।
শীতের চাদর গায়ে পেঁচিয়ে,সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে না পারার হতাশা।
রেললাইনের পাশে বসে চাঁদ দেখতে না পারার হতাশা।
0 মন্তব্যসমূহ