সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

অণুগল্প-ছুটি



ছুটি 

মেহেদী হাসান


ছোটবেলার কথা । আমি তখন খুব সম্ভবত ক্লাস থ্রি এর ছাত্র । একদিনের কথা,সেদিন আমাদের ঈদের ছুটি দেবে । যেহেতু ক্লাস দীর্ঘ দিনের জন্য ছুটি হতে যাচ্ছিলো তাই আমাদের সবার মনেই আনন্দের জোয়ার এসেছিলো । খুশিতে একে অপরকে ঈদের প্লান জানাচ্ছিলাম । এমন সময়ে দপ্তরী আংকেল নোটিশ খাতা হাতে আমাদের ক্লাসে আসলেন । তাকে দেখেই আমরা বুঝেছিলাম তিনি ছুটির নোটিশ নিয়ে এসেছে । আমরা চিৎকারে সাথে আমাদের উল্লাস প্রকাশ করি । সে এক বিরাট কান্ড । অবশেষে,বাংলা স্যারের ধমক শুনে আমরা শান্ত হই । বাংলা স্যারকে আমরা খুব ভয় পেতাম । স্যার আমাদের নোটিশ পড়ে শোনালেন ।তাও আবার খুব গভীর ভাবে ।যেনো কোনো শোক সংবাদ পাঠ করছে ! নোটিশ পড়া শেষ করে স্যার আমাদের ক্লাসের পড়া জিগ্যাস করলেন ।আজ ছুটি হবে তাই ক্লাসের কেউই পড়া তৈরী করে আসে নি । স্যার তো রেগে আগুন ! শাস্তি সরুপ ক্লাসে বসেই পড়া তৈরী করতে বললেন সবাইকে কেবল তার পরেই ছুটি হবে,তার আগে না ।আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম,একে একে অন্য সকল ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা উল্লাস করতে করতে বাড়ির পথ ধরেছে ।সেই দৃশ্য আমরা ভারাক্রান্ত মনে দেখছি,  আমাদের কারো মনই তখন পড়ার দিকে ছিলো না ।ফলে ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্রছাত্রীদেরও পড়া হচ্ছিলো না । স্যার আমাদের সমস্যাটা বুঝতে পারলেন ।এমন সময় বিদ্যৎ চলে গেলো । মাথার উপর ঘুর্নায়মান ফ্যানটাও আস্তে আস্তে তার গতি কমিয়ে আনলো ,স্যার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন । তারপর বললেন,যখন এই ফ্যানটা স্থির হবে ,তখন তোদের ছুটি ।আমাদের মুখে হাসি ফুটলো । আমরা চাতকের মত হাঁ করে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,আর মাত্র অল্প কিছু সময় । ফ্যানটা একসময় প্রায় স্থির হয়ে এলো ।।আমরা কাধে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথে পা বারানোর জন্য তৈরী হলাম ।এমন সময় ফ্যানটা আবার তার গতি ফিরে পেতে লাগলো মানে,বিদ্যুৎ চলে এসেছে ! আমরা আর কি করি ! পরবর্তীতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার অপেক্ষা না করে সবাই মিলে সোজা যে যার বাড়ির পথে ভোঁ দৌড় লাগালাম এবং মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলাম,স্কুল খোলার আগেই স্যার যেন ব্যাপারটি ভূলে যায় !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ