সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

ছোটগল্প-মুহূর্ত




 
সাবিকুর সিফাত

ছু‌টির ঘন্টা প‌রে গেল প্রায় ৩৫ মি‌নিট হ‌য়ে গে‌ছে।

অা‌মি চুপচাপ ব‌সে ছিলাম।সাদা স্কু‌লের শা‌র্টে বি‌চ্ছি‌রি রক‌মের কা‌লি লাগা‌নো।মন একটুও ভা‌লো নেই।মা আস‌লেই মা‌য়ের কা‌ছে বিচার দেবো। ক্লা‌সের দুষ্ট ছে‌লেটা সাদা শা‌র্টে কা‌লি মে‌খে দি‌য়ে‌ছে।

মা তো এখনও আস‌ছে না।

মন আরও খারাপ হ‌তে লাগল অামার।

মৃদুল,

‌শেফা‌লি খালা এর ম‌ধ্যে ডাক দি‌য়ে বল‌লেন-

তোমার মা ফোন দি‌য়ে‌ছিল ,আমার সা‌থে তোমা‌কে আজ বা‌ড়ি‌তে যে‌তে ব‌লে‌ছেন।

অা‌মি বলমাম চ‌লেন খালা।

‌শেফা‌লি খালা অামা‌দের স্কু‌লেই কাজ ক‌রে।

মা যখন আমা‌কে ভ‌র্তি করা‌তে যান স্কু‌লে শেফা‌লি খালা তখন আমা‌কে স্কু‌লের খাতা,ডা‌য়েরী,ব্যাচ এনে দি‌য়ে‌ছি‌লো।ফার্স্ট হ‌য়ে ক্লাস ওয়‌া‌নে উঠার প‌রে সব টিচাররাও অামা‌কে ভা‌লোবা‌সেন।‌শেফা‌লি খালাও।

মা ও শেফা‌লি খালা‌কে পছন্দ ক‌রেন,আমার খোঁজ খবরও নেন শেফা‌লি খালা।

বা‌ড়ির দি‌কে খালার সা‌থে হাঁট‌ছি অার ম‌নে ম‌নে সমস্ত রাস্তা ভাব‌ছিলাম,

মা কে‌নো আসে‌নি আমা‌কে নি‌তে।মা কেন এমন ক‌রে অামার সা‌থে। খা‌লি শু‌য়ে থা‌কে অার ব‌সে থা‌কে।আমি ঠিক করলাম বা‌ড়ি‌তে গি‌য়েই মা‌কে বলব,‌কে‌নো নি‌তে আসে‌নি ।

‌শেফা‌লি খালা বা‌ড়ি পৌঁ‌ছে দি‌লেন। 

বা‌ড়ি‌তে যে‌য়ে দে‌খি মা শু‌য়ে ঘুমা‌চ্ছে। দা‌দি আমার জামা কাপড় খু‌লে গা‌য়ে তেল মা‌খি‌য়ে ‌দি‌লেন।‌গোসল করা‌নোর প্রস্ত‌ুতি চল‌ছে।অা‌মি মা‌কে ছাড়া গোসল করব না। করবই না।কান্না কা‌টি শুরু করলাম। কিন্তু মা অাস‌ল না।

মা তো অনেক ভা‌লোবা‌সে অামা‌কে কিন্তু এখন এমন কেন কর‌ছে?

‌শেষ‌মেষ দা‌দিই ধ‌রে‌বে‌ঁধে গোসল করা‌লেন।ভাত মা‌খি‌য়ে খাওয়া‌লেন।মা গল্প শু‌নি‌য়ে ভাত খাওয়ায়।দা‌দি পঁচা।গল্প ব‌লে না।তাই ভাত খে‌তেও কষ্ট হয়।

তাই মা‌য়ের উপর রাগ বাড়‌তেই লাগ‌লো ।

মা কে‌নো স্কুল থে‌কে আন‌তে যা‌বে না?

‌কে‌নো গোসল ক‌রি‌য়ে দেয় না,খাই‌য়ে দেয় না?

মা কি অসুস্থ !

সন্ধ্যা হ‌য়ে এলো।

বা‌হি‌রে প্রচন্ড বাতাস,ঝড় হ‌চ্ছে সা‌থে বৃ‌ষ্টিও।

সারা‌দিন প‌রে সন্ধ্যায় মা ডাক‌লেন।অা‌মি মা‌য়ের পা‌শে বসে অা‌ছি খাঁ‌টে। মন খারাপ মা‌য়ের উপর।

মা বল‌লেন,গল্প শুন‌বি মৃদুল?

হুট ক‌রে অামার মন ভা‌লো হ‌য়ে গে‌লো।

বা‌হি‌রে প্রচন্ড বজ্রপাত হ‌চ্ছে। অা‌মি ভ‌য়ে মা কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছি।

মা গল্প বল‌তে শুরু কর‌লেন,

এক দে‌শে ছি‌লে‌া এক রাজা তার ছিল রাজপুত্র ।রাজপুত্র পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় ক‌রে ঘু‌রে বেড়াত। কিন্তু রাজপু‌ত্রের একা একা ভা‌লো লাগতা না,‌কোন খেলার সা‌থি নেই তার।তাই তার মন খারাপ হ‌য়ে যে‌তো।তাই রাজপু‌ত্রর খেলার সা‌থি ক‌রে একটা বোন নি‌য়ে আসল।

তারপর ওরা একসা‌থে ঘু‌রে বেড়াত পঙ্খীরাজ. . . .

মা, মা আমিও একটা বোন চাই,আ‌মিও ওর সা‌থে ঘু‌রে বেড়া‌বো।

হা বাবা,‌তোর জন্যও একটা খেলার সা‌থি নি‌য়ে আস‌বো।‌তোর খেলার সা‌থি খুঁজ‌তে খুজ‌তেই আমি অসুস্থ হ‌য়ে প‌রে‌ছি।‌তো‌কে স্কুল থে‌কে আন‌তে পারি না।

আমার খুব ভা‌লো লাগ‌ছে ।নতুন খেলার সা‌থি আস‌বে,আমার বোন অাস‌বে।‌

‌কি ‌যে মজা

অাচ্ছা ঠিকা‌ছে মা ও‌কে নি‌য়ে আস‌বে ক‌বে?

অাসব তাড়াতা‌ড়িই।তুই একা একা কত‌দিন খেল‌বি অার।

অাচ্ছা মা, ও‌কে আগে আনো‌নি কে‌নো?

এই যে খু‌ঁজে পেলাম এখন 

অাচ্ছা মা,ও‌কে নি‌য়ে কিন্তু তু‌মি আমি আমার স্কু‌লে যা‌বো।সবাই কে দেখা‌বো অামার বোন‌কে,আমার খেলার সা‌থি‌কে।

যা‌বে না? মা

যা‌বো বাবা,যা‌বো।

আচ্ছা এখন ঘুমাও বাবা।কাল স্কুল আছে তোমার।এ কদিন

‌তোমার দাদুই স্কু‌লে নি‌য়ে যা‌বে।

অাচ্ছা ঠিকা‌ছে মা।

ম‌নে উৎফুল্লতা নি‌য়ে ঘুমা‌চ্ছি কাল সবাই‌কে বল‌বো আমার খেলার সা‌থির কথা ,স্কু‌লের সবাই‌কে,ওই খারাপ ছে‌লেটা‌কেও ।ও‌কে আমি অার আমার বোন মি‌লে শাস্তি দে‌বো ।

অ‌নেক মজা হ‌বে।

বর্ষাকাল।সার‌দিন বৃ‌ষ্টি থা‌কে।‌মেঘ ক‌রে অন্ধকার হ‌য়ে অা‌সে। কখন সকাল কখন দুপুর আর কখনইবা সন্ধ্যা বুঝা যায় না।

সাম‌নের ঘ‌রে ব‌সে ছিলাম 

বৃ‌ষ্টি দেখ‌ছি,আকাশ কাঁদ‌ছি‌লো ,আকা‌শের কান্না বৃ‌ষ্টি।

ডাক্তার ডে‌কে নি‌য়ে আসা হ‌লো।

মা ও কাঁদ‌ছে। আমার খেলার সা‌থি খুঁজ‌তে খুঁজ‌তে মা অসুস্থ।মা ব‌লে‌ছি‌লো আজ না‌কি নি‌য়ে আস‌বে।

অা‌মি দা‌দির কা‌ছে ব‌সে আছি। ঘর ভ‌র্তি লোকজন। কিন্তু আমা‌কে মা‌য়ের কা‌ছে যে‌তে দেই‌নি কেউ। 

কি হ‌য়ে‌ছে মা‌য়ের!!

কাঁদ‌ছি। 

বৃ‌ষ্টি বাড়‌ছে।

বৃ‌ষ্টির ছাট এসে ভি‌জি‌য়ে দি‌চ্ছে।‌চোখ মুখ গ‌ড়ি‌য়ে গ‌ড়ি‌য়ে বৃ‌ষ্টি।

‌কিছুক্ষন প‌রে খালা কা‌কে যেন নি‌য়ে এসে বলে‌লো,এই দেখ তোর মা তোর জন্য খেলার সা‌থি নি‌য়ে এসে‌ছে।আন‌ন্দে চোখ মুখ মু‌ছে ফেললাম।

কই দে‌খি,কই আমার খেলার সা‌থি।

অা‌মি ও‌কে কো‌লে নিলাম।আদর ক‌রে দিলাম।মা ও‌কে কপা‌লে কা‌লো কাজল দি‌য়ে সা‌জি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে ।

কত সুন্দর ও।‌

কি সুন্দর হাস‌ছে।

আমার মু‌খের দি‌কে হাত বা‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছে,আমা‌কেও আদর ক‌রে দি‌বে ব‌লে।

মা আমার জন্য অব‌শে‌ষে একটা বোন আন‌লো।

বাব‌া‌কে বল‌ছিলাম একটা ঘোড়া কি‌নে দি‌তে ।আমি ঘোড়ার পি‌ঠে ক‌রে সব জায়গা ঘুরব।বাবা ঘোড়া কি‌নে আনে‌নি সেবার।আমার বাবার ওপর অনেক রাগ লাগল।প‌রেরবার ঘোড়া নি‌য়ে আস‌বে ব‌লে আর অা‌সে‌নি।‌কোথায় যেন হা‌রি‌য়ে গে‌ছে।আমার এখনও রাগ জমা।

অামা‌কে মা‌কে এভা‌বে ফে‌লে চ‌লো গে‌লো কই যে‌নো।হয়ত আজ‌কে নিশ্চই অামার খেলার সা‌থি‌কে দেখ‌তে আস‌বে।

‌কিন্তু ঘোড়া নি‌য়ে না আস‌লে ও‌কে দেখ‌তেই দে‌বো না।‌

কি অদ্ভুত ! 

বাবা কিভা‌বে পারল?

মা অসুস্থ থাকার প‌রেও বাবা এলো না।

হঠাৎ ক‌রে বৃ‌ষ্টির ছাট চে‌াখে‌ অাস‌তেই আমার ঘোর কাটল।বারান্দায় দা‌ড়ি‌য়ে আছি ।পু‌রো দ‌মে বৃ‌ষ্টি শুরু হ‌য়ে গে‌লো।

চোখ বন্ধ কর‌তেই আমার ১৫ বছর আগের কথা ম‌নে পরে গে‌লো।অাজও ১৫ বছর প‌রে এসে স্মৃ‌তিগু‌লো চো‌খের সাম‌নে চ‌লে আস‌ছে,ঘুমন্ত স্নায়ু‌কে এসে খোঁচা দি‌চ্ছে,‌চোখ জোড়া ভি‌জি‌য়ে দি‌চ্ছে।

মৃদুল?

মৃদুল,জানালা লা‌গি‌য়ে দে বৃ‌ষ্টি শুরু হ‌য়ে‌ছে।

দি‌চ্ছি মা।

মা অাজ‌কে রোজা।‌বো‌নের জন্যই ।চু‌পিচু‌পি দেখ‌ছি মা মোনাজ‌া‌তে কাঁদ‌ছে।আ‌মি মা‌য়ের কা‌ছে যে‌তে পারলাম না।কাঁদ‌ছে বোনটার জন্য।আমার খেলার সা‌থিটার জন্য।তাঁর মে‌য়ের জন্য।

যখন ওর বয়স দুবছর তখন ভীষণ জ্বর হ‌য়ে‌ছি‌লো ওর,অনেক চেষ্টা ক‌রেও মা ও‌কে

চেষ্টা ক‌রেও মা ও‌কে বাঁচা‌তে পার‌লো না।

কাঁদ‌ছে মা।

কাঁদুক।

কাঁদ‌লে মন হালকা হয়।আকা‌শে মেঘ জম‌লে বৃ‌ষ্টি ঝ‌রিয়ে দেয় ,‌মেঘ কেঁ‌টে যায়।মানু‌ষের ম‌নে কষ্ট জম‌লে ,বৃ‌ষ্টি নামে চোখ জু‌ড়ে,‌মু‌ছে যায় কষ্ট।


ওর জন্য আমারও কষ্ট হয় কিন্তু ওর উপর রাগ হয় খুব অামার, ঠিক যেমনটা বাবার উপর ।বাবাও চ‌লে গে‌লো।আর ও চ‌লে গে‌লো।

আমা‌দের কে রে‌খে কেন চ‌লে গে‌লো ও!

‌কে‌নো!!


স্বরূপকাঠী, পিরোজপুর। 


প্রিয় পাঠক ,লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।আমাদের কেও লিখতে পারেন আপনি । লিখতে পারেন-ভালোবাসার গল্প (Valobashar Golpo) ছোট গল্প (Choto-Golpo) ভালবাসার গল্প।(Balobashar Golpo) হাসির গল্প।(Hashir Golpo)

জীবনের গল্প (Jiboner Golpo) প্রেমের গল্প (Premer Golpo)




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ