একজন তুখোড় মেধাবী ছাত্রের একুশ দিনের কারাবাস। অতঃপর দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হয়ে ওঠা। না, কোনো ভারতীয় ওয়েব সিরিজ বা হলিউড সিনেমার গল্প বলছি না। এমনই চাঞ্চল্যকর বাস্তব কাহিনির নায়ক বাংলাদেশি সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর। চাঁদাবাজি, খুনসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যাতে যুক্ত ছিল না সে। আশ্চর্যজনকভাবে, অপরাধজগতে ঢোকার পর তাকে আর কেউ চোখে দেখেনি। কে এই কালা জাহাঙ্গীর? এখন কোথায় সে?
১৯৭৭ সালে বগুড়ায় জন্ম নেয় মো. ফেরদৌস জাহাঙ্গীর। বেড়ে ওঠা ঢাকার ইব্রাহিমপুরে, স্কুলশিক্ষিকা মায়ের কাছে। ছোটবেলা থেকেই তুখোড় মেধাবী। সাফল্যের সাথে স্কুল জীবন শেষ করে তেঁজগাঁও কলেজে ভর্তি হলেও শেষ হয়নি কলেজজীবন। রাজধানীর কাফরুলে দুই যুবকের সাথে বিরোধে জড়িয়ে ছুরিকাঘাত করে বসে জাহাঙ্গীর। এবং প্রথম ও একমাত্রবারের মতো ২১ দিনের জন্য জেলে যায়। এরপর আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি তার। সন্ত্রাসের অন্ধকার জগতে ঢুকে ভয়ংকর কিলিং মিশনে অংশ নিয়ে অল্প সময়েই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষে উঠে আসে কালাজাহাঙ্গীর। ভয়ংকর সব সন্ত্রাসীদের নিয়ে গঠন করে ‘ব্ল্যাক প্যানথার’ গ্যাং।
১৯৯৫-এর পর ঢাকা শহরের প্রায় সব চাঁদাবাজিই হতো তার নিয়ন্ত্রণে। বড় বড় ব্যবসায়ীরাও টেলিফোনে তার হুমকিতে টাকা দিতো। তবে কেউই নিজ চোখে দেখেনি কালাজাহাঙ্গীরকে। অবৈধ অস্ত্রের বড় মজুদ ছিল তার দখলে। তার প্রথম আলোচিত খুন ছিল ১৯৯৬ সালে কিসলু হত্যা। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার, ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমান লিটনকে জনসম্মুখে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে। ধানমন্ডির অর্কিড প্লাজার সিঁড়িতে লিটনের শরীরে ২২টি গুলি চালায় জাহাঙ্গীর ও তার দল। প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দিক দিয়ে ব্যাপক ক্ষমতাধর ছিলেন সাইদুর। তাকে প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশ অবাক হয় পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন। এরপর আইনজীবী, রাজনীতিকসহ বহু হাইপ্রোফাইল হত্যা তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়। আদালতে মৃত্যুদন্ডের ঘোষনা এলেও তাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।
২০০১ সালে র্যাব গঠনের পর দোসররা একে একে ক্রসফায়ারে মারা যেতে থাকলে সে আত্মগোপনে যায়। কালাজাহাঙ্গীর এখনো বেঁচে আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ বলেছে র্যাবের গুলিতে, কেউ বলেছে প্রতিপক্ষের হাতে মারা গেছে। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি আসে তার মা পিয়ারা বেগমের কাছ থেকে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, জাহাঙ্গীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ কথা তিনি জানিয়েছেন বন্ধু নিটেলের সূত্র ধরে। কিন্তু নিশ্চিত প্রমাণ না থাকায় পুলিশের রেকর্ডে এখনো জীবিত দেখানো হয় কালা জাহাঙ্গীরকে। অনেকে মনে করেন, সে এখনো বেঁচে আছে, বিদেশে কোনো বিলাসবহুল জীবনে। হয়তো একদিন আবার ফিরে আসবে—নতুন পরিচয়ে, নতুন কোনো অপরাধের কেন্দ্রে।
এদিকে সম্প্রতি ‘ওয়ানস আপন আ টাইন ইন ঢাকা’ সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় নাম লেখাতে যাচ্ছেন নাট্যনির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ। যেখানে সিনেমার ট্যাগলাইন-‘আমি কালা’। গুঞ্জন উঠেছিল নতুন এই সিনেমায় থাকবেন শরীফুল রাজ ও মোশাররফ করিম। তবে সেই মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে আবারও লাইম লাইটে শাকিব। রাজ নয়, সিনেমাটিতে থাকছেন শাকিব খান। মূলত ঢাকার নব্বই দশকের আন্ডার ওয়ার্ল্ডকে কেন্দ্র করে নির্মিত হবে ছবিটি। এতে শাকিব খান অভিনয় করবেন সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘কালা জাহাঙ্গীর’-এর ভূমিকায়। কালা জাহাঙ্গীরের ভূমিকায় মেগাস্টার শাকিব খানকে কেমন লাগবে? জানাতে ভুলবেন না।
0 মন্তব্যসমূহ