সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

হানিট্রাপ কী?

 

বাংলায় একটি প্রচলিত কথা আছে—ষড়রিপুর মধ্যে প্রথম রিপু ‘কাম’। ইতিহাস বলে, এই কামই পারে যেকোনো মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে। জীবনে কামনা-বাসনা স্বাভাবিক, নারী-সঙ্গের প্রয়োজনও অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু যখন সেই আকাঙ্ক্ষা একে ফাঁদে পরিণত করে, তখন তা হয়ে ওঠে “The Great Failure of Life”।এমনই এক ভয়ংকর কৌশলের নাম হানিট্র্যাপ, যা বিশ্ব কূটনীতিতে পরিণত হয়েছে এক নীরব অস্ত্রে—জটিল, মায়াবী এবং বিধ্বংসী। যেখানে চক্রাকারে দৃষ্টি বিনিময়, আবেগ, প্রেম, ভালোবাসার শেষ পরিণতি হয় তথ্যপাচারে। আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধাবস্থাপূর্ণ দেশেই দেখা যায় এই হানিট্রাপের ঘটনা। একটু চোখ কান খোলা রাখলে, বাংলাদেশেও ঘটে এমন ঘটনা। কী এই হানিট্র্যাপ? কূটণীতিতে কেন মারাত্মক ভয়াবহ হানিট্রাপ? 

..............


‘হানিট্র্যাপ’ শব্দটির সাহিত্যিক ব্যবহার প্রথম দেখা যায় ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত জন লে ক্যারের গোয়েন্দা উপন্যাস Tinker, Tailor, Soldier, Spy-তে। এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় “ভালোবাসার ফাঁদ”। তবে এটিতে হানিমুনের রোমান্টিকতা থাকলেও, প্রকৃত অর্থে এটি এক ভয়ংকর ফাঁদ—কামনার মোড়কে মোড়ানো এক গোয়েন্দা কৌশল, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো তথ্য চুরি, ব্ল্যাকমেইল ও চরিত্র ধ্বংস। হানিট্র্যাপের মূল ভিত্তি হচ্ছে টার্গেট ব্যক্তির দুর্বলতা, বিশেষ করে যৌন দুর্বলতা বা একাকিত্ব। সাধারণত প্রতারক চক্রে থাকে তরুণী বা আকর্ষণীয় নারী, যারা প্রথমে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গভীরতা পায়, তৈরি হয় আবেগ, ভালোবাসার মোহ। একপর্যায়ে ভিডিও কলে আপত্তিকর মুহূর্ত ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আদায় করা হয় গোপন তথ্য বা অর্থ। শুধু সাধারণ ব্যক্তি নয়, বরং রাজনীতিক, কূটনৈতিক, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক এমনকি সেনা ও গোয়েন্দা সদস্যদেরও টার্গেটে থাকেন।


পার্শবর্তীদেশ ভারতে বেশ কিছু বছর ধরেই হানিট্রাপের ঘটনা শোনা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বরে যৌনতার ফাঁদে পড়ে পাকিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রীর এক কর্মীকে। তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছিল। পুলি‌শের দাবি ছিল, তিনি ‘হানিট্র্যাপ’-এর শিকার। এর আগে এবং পরেও পাক গুপ্তচর সংস্থার পাতা যৌনতার ফাঁদে পা দিয়ে দেশের গোপন তথ্য পাচার করার অভিযোগ কম নয়। ২০১৫ সালে ভারতীয় এয়ারফোর্সের অফিসার কেকে রঞ্জিতকে একই ভাবে ফাঁদে ফেলেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা, বলে দাবী ভারতের। 


..............


ডিজিটাল ক্ষেত্রেও বেড়েছে হানিট্রাপের দৌরত্ম। হানিট্রাপ যে, শুধু একটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্তাদের উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহৃত হয় এমন নয়, বিভিন্ন ব্যাক্তিত্ত্ব সম্পন্ন মানুষের উদ্দ্যেশ্যেও হানিট্রাপ ব্যবহার করা হয়। 


রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা FSB (পূর্বতন KGB) গোয়েন্দা ইতিহাসে ‘Kompromat’ শব্দটিকে একটি কৌশলগত অস্ত্রে পরিণত করেছে। ঋঝই (FSB (Federal Security Service of the Russian Federation) হলো রাশিয়ার প্রধান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা, যা KGB-এর (Committee for State Security) উত্তরসূরি। Kompromat  হলো রাশিয়ার গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত একটি শব্দ, যার পূর্ণ রূপ : ‘Compromising Material’ অর্থাৎ এমন তথ্য, ছবি, ভিডিও বা প্রমাণ যা কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তাকে হেয় করা, ব্ল্যাকমেইল করা, কিংবা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় 


ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে সর্বশেষ হানি ট্র্যাপের শিকার হচ্ছে ইরান। এরই মধ্যে এই ট্র্যাপে ইরানের সামরিক-বেসামরিক অসংখ্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হত্যার শিকার হয়েছেন। হয়তো আরও হবেন। বিশ্বজূড়ে হানিট্রাপের আছে নানা ঘটনা, বাংলাদেশে হানিট্র্যাপের ব্যবহার একটু ভিন্নভাবে দেখা যায়। এখানে এটি সরাসরি স্পাইংয়ের জন্য ব্যবহৃত না হলেও রাজনৈতিক চরিত্র হনন ও ব্ল্যাকমেইলের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ