প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার চেয়ে সম্পুর্ন আলাদা পিআর বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। অর্থাৎ এখানে প্রতিটি ভোটারের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত পদ্ধতিতে দেখা যায় কোনো আসন থেকে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পায় সেই প্রার্থীই সংসদ সদস্য হন। উদাহরণস্বরূপ একটি আসন থেকে একজন প্রার্থী ৩০ শতাংশ ভোট পেলো। বাকি তিনজন প্রার্থী ২০ শতাংশ হারে মোট ৬০ শতাংশ ভোট পেলো। সেক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ভোটধারী ব্যক্তি সংসদ সদস্য হবেন। বাকি ৬০ শতাংশ ভোট কোনো কাজেই আসবে না। এই সীমাবদ্ধতা দূর হয় পিআর পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে সারাদেশের ভোট একসাথে গননা হয়। জনগন কোনো ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে দলকে ভোট দেয়। কোনো দল যদি সারা দেশ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পায়, ৩০০ আসনের বিপরীতে সংসদে সেই দলের জন্য ৬০ টি আসন বরাদ্দ হয়ে যায়৷
আর এ কারনেই ছোট দলগুলো পিআর পদ্ধতি সমর্থন করে। বাংলাদেশ ইসলামি জোটও এর ব্যতিক্রম নয়। সারাদেশে তাদের বিপুল ভোটব্যাংক রয়েছে। কিন্তু একক দল হিসেবে বিএনপির ভোটব্যাংকও অনেক বড়। প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে খুব সামান্য ভোটে বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও সংসদে যেতে পারবে না ইসলামি জোট। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে যত শতাংশ ভোট পাবে সেই হিসেবে সংসদ সদস্য দিতে পারবে ইসলামি জোটভুক্ত দলগুলো৷ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সংসদের প্রস্তাবিত উভয় কক্ষেই এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। এটি হলে কোনো দল ‘জালেম’ হওয়ার সুযোগ পাবে না। তবে এ পদ্ধতির বিপক্ষে বিএনপি।
সব সুবিধার মাঝে কিছু অসুবিধাও আছে পিআর পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতি চালু হলে সংসদীয় আসন ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারিত হবে না। বর্তমানে দেখা যায় একজন সাংসদ বা এমপি তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি হয়ে সংসদে থাকেন৷ এলাকার সমস্যা, সম্ভাবনার কথা সংসদে উপস্থাপন করতে পারেন৷ কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কেবল দলীয় প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে থাকবেন। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পিআর পদ্ধতির এ সীমাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। নির্ধারিত আসনের বাইরেও বিভাগীয় পর্যায়ের কিছু প্রতিনিধি সংসদে বসার সুযোগ পান। সবদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কোন পদ্ধতিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
0 মন্তব্যসমূহ