একটি দেশ পরিচালনার জন্য সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের রাজনৈতিক দক্ষতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জ্ঞান। কারন গোটা দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষাসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর রাখতে হয় রাষ্ট্রপ্রধানের৷ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে৷ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে দেখা যায় বেশিরভাগ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই বেশ এগিয়ে শিক্ষার দিক দিয়ে৷ কিন্তু দক্ষিন এশিয়ার নেতারা কতটা এগিয়ে শিক্ষা-দীক্ষায়? ।
ভূটান: বাংলাদেশের থেকে বেশ এগিয়ে ছোটো দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তবগে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন তিনি৷ উল্লেখ্য তাঁর আগের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং পেশায় ছিলেন চিকিৎসক৷ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা কাটিয়ে বর্তমানে হাল ধরেছেন হরিনী অমরসূর্য। স্কটল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক নৃবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি বসেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে।
পাকিস্তান: ২০২৪ সালের ৪ মার্চ থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিয়া মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ। লাহোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছেন তিনি। তবে ভাষাগত দক্ষতার দিক দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন শেহবাজ শরীফ। উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, ইংরেজি, জার্মান ও আরবি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন শেহবাজ শরীফ।
ভারত: শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকারি তথ্যমতে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন মোদি। কিন্তু বিরোধী দলের দাবী, এই ডিগ্রির কোনো সত্যতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দলিল দেয়ার চেষ্টা করলেও তাতে নামের বানান ভুল, এবং ফরম্যাটে ভুলসহ বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা বের করেছে বিরোধী দল। নরেন্দ্র মোদিকে বারবার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমান দিতে বলা হলেও তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সাথে ইংরেজিতে হওয়া বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দোভাষী রাখতে দেখা যায় নরেন্দ্র মোদিকে।
বাংলাদেশ: ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করার পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন মোহাম্মদ ইউনুস। বিশ্ববরেণ্য নানা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননার পাশাপাশি গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অর্জন করেছেন শান্তিতে নোবেল। শুধু দক্ষিন এশিয়াতেই নয়, বর্তমানে পুরো বিশ্বেই মাত্র তিনজন নোবেল লরিয়েট নিযুক্ত আছেন সরকারপ্রধানের পদে।তাদের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনূস একজন। সেদিক বিবেচনায় অরাজনৈতিক ব্যাক্তি হয়েও একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়ে গর্বের জায়গা থেকেই যায় বাংলাদেশের নাগরিকদের।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নেতৃত্বের ধরন বিবেচনায় স্পষ্টভাবে দেখা যায়, কারো কাছে উচ্চশিক্ষা মূল হাতিয়ার হলেও কারো শক্তি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও জনসেবা। একজন অরাজনৈতিক ব্যাক্তি হয়েও বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বৈজ্ঞানিক ও একাডেমিক দক্ষতার মাধ্যমে শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব মঞ্চেও সামাজিক পরিবর্তনের মডেল হয়ে আছেন। তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও নোবেল পুরস্কার তাকে শিক্ষাগত দিক থেকে এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা নেতৃত্বে পরিণত করেছে। সুতরাং, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা নেতা বলেই ধরা হয়। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় অভিজ্ঞতা ও জনমুখী নেতৃত্বও সমান গুরুত্বপূর্ণ, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য নেতারা সফলভাবে প্রদর্শন করছেন।
0 মন্তব্যসমূহ