বাংলাদেশের বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. ইব্রাহিম। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই বিজ্ঞান প্রসার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এই পথিকৃৎ। নানা রকম সম্মাননা, শিক্ষা ও প্রকাশনার বাইরেও তার একটি পরিচয়, তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনুসের আপন ভাই। তবে সে পরিচয়কে সবসময় আড়ালেই রাখতে চান দুই ভাই। ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকার পরেও তার ভাই হিসেবে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা নিতে দেখা যায়নি ড. ইব্রাহিমকে। বাংলাদেশের জন্য কি অবদান রাখছেন এই পথিকৃৎ?
ড. ইব্রাহিম ১৯৪৫ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হাজী মুহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগরের নয় সন্তানের মাঝে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ঠিক পরবর্তী সন্তানই ড. ইব্রাহিম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনে ড. ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে অবসর গ্রহনের পর, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর জেনারেল এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ড. ইব্রাহিম বিজ্ঞান শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সত্তরের দশক থেকেই তিনি এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞান চর্চার গ্রামীণ আনন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এর একটি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় অবস্থিত। তিনি সেন্টার ফর মাস এডুকেশন ইন সাইন্স নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। যা গ্রামীণ অঞ্চলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে কাজ করে। তিনি 'বিজ্ঞান সাময়িকী' নামক বাংলাদেশের প্রথম মাসিক বিজ্ঞান পত্রিকার সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের 'দেশ ও বিজ্ঞান' অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন।
বিজ্ঞানশিক্ষায় বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই এর রচয়িতা ড. ইব্রাহিম। বিজ্ঞান ও সাহিত্যচর্চায় ভূমিকা রাখায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন তিনি। অনেকের মতে তাকে এত বছর অন্ধকারেই রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার। ড. জাফর ইকবালের মত আওয়ামী পন্থী লেখকদের নিয়ে যতটা মাতামাতি করা হয়েছে, সে তুলনায় কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয়নি এই পদার্থবিদকে। তবে এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ড. ইব্রাহিম। আপন ভাই ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টার চেয়ারে থাকলেও কখনোই মিডিয়া বা রাজনীতিতে সামনে থাকতে দেখা যায়নি ড. ইব্রাহিম
0 মন্তব্যসমূহ