সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

সমাজ ও সংস্কৃতি: বর্তমান প্রেক্ষিত

 



বারিদ বরন গুপ্ত


 বর্তমানে আমরা উত্তর আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছি। বলতে পারি প্রযুক্তির দৌলতে আমাদের জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, কিন্তু আমরা যতই আধুনিক হচ্ছি ততই মন থেকে মূল্যবোধগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ আজ ইঁদুর দৌড় শুরু করেছে, তার জন্য ন্যায়- নীতি বিসর্জন দিতে পিছপা হচ্ছে না।

সমাজ আজ উদভ্রান্তের মত দৌড়াচ্ছে, কোথায় গিয়ে যে থামবে তা একমাত্র ভবিষ্যৎ ই বলতে পারে।

 বর্তমান সমাজ এক নীতিহীনতায় গতিশীল। মানুষ আজ যেনতেন প্রকারে রাতারাতি অর্থবান হতে চাইছে, আধুনিক ভোগবাদী জীবন মানুষকে আর মানুষ রাখছে না, ধীরে ধীরে অমানুষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলি ও অস্থিরতায় ভুগছে, যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে তার জন্য চলছে সস্তার ফুলঝুরি,বলতে গেলে সস্তায় জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য ছুঁড়ে দিচ্ছে লোভনীয় টোপ, জনগণ ও লোভ সামলাতে পারছে না, টোপ ধরার জন্য আজ সমাজ অভ্যন্তরে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছে।

 

 শুধু তাই নয়, চারিদিকে চলছে ন্যাকামি, ভন্ডামি, সমানে চলছে দালালি , আর কাদা ছোড়াছুড়ি, মাঝে মাঝে এমন সব বাক্য প্রয়োগ করছে যা শুধু ছাপার অযোগ্য নয় শোনার ও অযোগ্য। ভাবতে অবাক লাগে এরাই একদিন শাসক হয়ে লোককে নীতি শিক্ষা দেবে বা আমলাদের চালনা করবে। আরো বলা যেতে পারে যে আজ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আজ শালীনতার মাত্রা ছড়াচ্ছে ‌। রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে সমাজ রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, এতে বলিও হচ্ছে কেউ কেউ, ভাবতেই অবাক লাগে রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে ক্ষমতার আঙিনায় আসতে চাইছে তা শুধু কিছু স্বার্থ আর লোভ ছাড়া আর অন্য কিছু বলা যেতে পারে না। আবার দেখা যাচ্ছে কিছু বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক দলগুলির দলদাসের ভূমিকা পালন করছে, ভবিষ্যতে কিছু পাওয়ার আশায়। অর্থাৎ এরাও নীতি ঞ্জান হারিয়েছে।

 

বর্তমান সমাজ যেন দুর্নীতির মধুভান্ডে পরিনত হয়েছে, বলতে গেলে দুর্নীতি আজ সমাজকে গ্রাস করতে চাইছে, আজ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতির আখড়া, মনে হচ্ছে যেন কিছু না দিলে কিছু পাওয়া যায় না, বিধিবদ্ধ এবং অবিধিবদ্ধ সমাজ নিয়ন্ত্রক গুলো যেন আজ অনেক হালকা হয়ে গেছে, যার ফলে দুর্নীতির চক্র যেন বেড়েই চলেছে, সমাজ একটা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থা যদি ঢিলেঢালা হয়ে যায় তাহলে তো দুর্নীতি বাড়তেই  থাকবে। আজকাল দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হয় না, তারা দুর্নীতি করেও সমাজে বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছ, সমাজের মানুষজন তা দেখছে, প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছ, ফলে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে, আজকাল দুর্নীতি যেনো মানুষের গাসহা হয়ে পড়েছে। অনেক সময় দুর্নীতিবাজরা গোপনে গোপনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করে, কাটমানি চলে যায় নির্বাচনী ফান্ডে। আজকে পৃথিবীর প্রায় সব সমাজেই একই চালচিত্র, তবে দুর্নীতির নিরিক্ষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যেন প্রতিযোগিতা শুরু করেছে একমাত্র ভুটান এর থেকে অনেকটা বাইরে।

 

উল্লেখ করা যেতে পারে যে বর্তমানে ভোগবাদ এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ এর রমরমা, সমাজতাত্ত্বিক দের মতে সংস্কৃতির বিলম্বন ঘটছে, বর্তমানে বস্তুগত সংস্কৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতি কে পিছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে সমাজ থেকে দ্রুত মূল্যবোধ পিছু হটছে, এই প্রসঙ্গে সমাজতাত্ত্বিক আগবার্ণ এবং নিয়মমাফিক সামাজিক পরিবেশের সাথে বর্তমান সামাজিক জীবন ধারার অসঙ্গতির দিকটাই তুলে ধরেছেন। ব্যক্তির জীবন ধারার সাথে বর্তমানে সমষ্টির জীবনধারার বৈপরীত্য জনিত কারণে সমাজে একটা বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে, এই বিশৃঙ্খলা জনিত কারণে সমাজের প্রচলিত নিয়ম বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে যার ফলে সমাজ এক অস্থির পরিস্থিতির দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে।

 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, এহেন পরিস্থিতিতে থেকে সমাজকে বেরিয়ে আসতে হলে সমাজের মূল্যবোধের চর্চা বাড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই, তাছাড়া বিধিবদ্ধ এবং ও বিধিবদ্ধ সংগঠন গুলিকে শক্তিশালী করতে হবে, প্রচলিত ব্যবস্থা এবং সামাজিক পরিকাঠামো মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে, সামাজিকীকরণের মাধ্যম গুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, হয়তো তবেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটা আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে পারবো।

 

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ