ছবি-সাবিকুর সিফাত
আষাঢ় এলো,অবিরাম বারিধারা নিয়ে
আশিক মাহমুদ রিয়াদ
"কাল বৈশাখের রঙিলা বাতাস-
চৈত্রের দুপুর গড়িয়ে,
জৈষ্ঠের আম-কাঠালের গন্ধ মেখে,
দক্ষিণ আকাশে কালো মেঘে!
উতলা বাতাস,স্নিগ্ধভেজা গন্ধ নিয়ে,
আষাঢ় এলো ঘনঘোর বরিষার সাথে। "
বাতাসে স্নিগ্ধ ভেজা গন্ধ! নদীর পানি উতলা। ভরা জোয়ার। রাখাল মাথার গামছে খুলে কাধে জড়িয়ে নেয়,গরুকে বলে- ঠ্যায় ঠ্যায়। হঠাৎ করেই ঝুপ করে নামলো বৃষ্টি, নদীতে থাকা বৃদ্ধ জেলের মনে পড়লো আজ যে আষাঢ়ের প্রথম দিন।
আষাঢ় বাংলা বছরের তৃতীয় মাস। বৈশাখ জৈষ্ঠের পর পালাক্রমে বাংলা ঋতুতে আবির্ভাব ঘটে আষাঢ়ের।বৃষ্টির অদূষিত ফোটায় চনমনে সজীব-কোমল স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতি। সারাদিন টিপটিপ করে অবিরত বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে৷ বনবাদাড়ে পাখিদের কোলাহল আর বৃষ্টির ফোটা মন কেড়ে নেয়। পৃথিবীর ছোট্ট এ ভূখন্ডে মোট ছয়টি ঋতুর পালাক্রম ঘটে। আষাঢ় না আসলে যেন বাংলার এই রূপের লাবন্য, সৌন্দর্য প্রকাশ পেত না৷ আষাঢ় বাংলার জনপদ,গ্রাম কিংবা শহুরে পরিবেশে একেক ধরনের আবহ সৃষ্টি করে।
গ্রামীন জনপদে প্রকৃতির লাবন্যতা ফুটে ওঠে। খাল-বিল, নদী নালা সব টলমলে জলে টইটম্বুর। মাঠে রোপন করা হয় সোনার ফসল। কাঁচা পথঘাট নরম হয়ে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। রাখাল বালক গরু চরায় নদীর ধারের কোন শঙ্খচিল বালুচরে।নীল গগনে কালো মেঘের আস্তরণ আর আকাশে মেঘেদের ডাকাডাকি দেখে কবিগুরুর কবিতার দুলাইন মনে পড়ে যায়-
"বাদলের ধারা ঝরে ঝর - ঝর,
আউশের খেত জলে ভর - ভর,
কালী - মাখা মেঘে ও পারে আঁধার
ঘনিয়েছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে"
শহুরে জীবনে আষাঢ় নিয়ে আসে প্রশান্তি। গ্রীষ্মের তাপদাহে যখন শহুরের রাজপথে তাপদাহ উড়ছে ঠিক তখনই যেন শান্তির ফোঁটা নিয়ে বাংলার শহুরে জনপদে হাজির হয় আষাঢ়।
কবি সুফিয়া কামালের দুটি লাইন-
আমি বর্ষা, আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি মায়ার কাজল চোখে, মমতার বর্মপুট ভরি।
চারদিকে ঝমঝম বৃষ্টি,নগরের রাজপথে মানুষের ছোটাছুটি কেউ কেউ বৃষ্টির ফোটা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয় ছাউনির নিচে,কেউ জানলার গ্রীল থেকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটার স্পর্শ নেয়।প্রেমিক যুগল বৃষ্টিতে ভিজে একসাথে। প্রেমিকা প্রেমিকের মাথার জল মুছে দেয়। কয়েদীদের গাড়ির গ্রীলের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোয় বর্ষা প্রিয় কোন কয়েদী।
বর্ষা প্রকৃতিকে নতুন সাজে সাজায়। বৃষ্টির ফলে সতেজ হয়ে উঠে গাছপালা। এ সময় নানা ধরনের ফুল ফোটে। প্রকৃতিতে ফিরে আসে সজীবতা। কদম, কেয়া, জুঁই, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার, গন্ধ এ ঋতুকে বিমোহিত করে তোলে। ধুলোবালির আস্তরন পড়ে থাকা গাছপালা বৃষ্টির ফোটায় ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে যায়। গাছে গাছে সবুজ পাতা দেখা যায়।
ভোজন রসিক বাঙালির জন্য সারা বছরই থাকে সুস্বাদু, চিভে জল আনা সব খাবার৷ বর্ষাকালের সাথে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু খাবারের নাম-
সারাদিন টিপটিপ বৃষ্টির সাথে এক প্লেট খিচুরি কি না হলে চলে?
নদী মাতৃক এ দেশে ইলিশ বাঙালীর জাতীয় মাছ। নদীর পাড়ে ভেজা বাতাসের সাথে নদীর তাজা ইলিশ, ডাল ভর্তা আর পোড়া মরিচে কামড় দিতেই হারিয়ে যেতে পারেন অন্য এক দুনিয়ায় ।
ইলিশের আছে আরো অনেক রান্নার ধরন। সর্ষে বাটা ইলিশ,ভাপা ইলিশ, ইলিশ ভাজা আরো কত কি!
আষাঢ় বাংলার মানুষের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলার প্রত্যেকটি ঋতু কবি কিংবা লেখক সৃষ্টিতে অনুকূল। তাই তো বর্ষা বাংলার কাব্যিক সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করেছে।
বর্ষাকাল বাংলার কৃষিকে করেছে সমৃদ্ধ। সুজলা-সুফলা এ বাংলার বিস্তৃত জনপদের মাটিকে করেছে উর্বর। তাইতো কৃষকেরা তাদের স্বপ্ন অর্থাৎ ফসল রোপন করে এ বাংলার মাটিতে।
প্রকৃতিক দূর্যোগের এই দেশে বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে। নদীভাঙন ঘূর্নিঝড়,জলচ্ছাস,পাহাড়ধসের মতো ঘটনা ঘটে।
বর্ষাকালকে বলা হয় বৃক্ষরোপনের উপযুক্ত সময়। এ সময় বৃক্ষ রোপন করা হয়। আমাদের সকলের উচিত অন্তত একটি করে গাছ এই বর্ষায় লাগানো। আমাদের এই সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামল নদীমাত্রিক বাংলাদেশকে আরো সবুজ এবং প্রকৃতিকে অনূকূলে রাখার জন্য বৃক্ষরোপন করা উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ